Job Seeker

আকর্ষণীয় সিভি তৈরির নিয়ম

স্বপ্নের চাকরি পাওয়ার জন্য শুধু স্বপ্ন দেখলেই হবে না। স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য আপনার সেই অনুযায়ী কাজও করতে হবে। আর এই চাকরির বাজারে আপনার নিজের যদি একটি আকর্ষণীয় সিভি থাকে তাহলে সেটা আপনার স্বপ্ন বাস্তবায়নে অনেকাংশে হেল্প করবে। কারণ, কোম্পানিগুলো লোক নিয়োগের সময় কিন্তু শুরুতে আপনাকে দেখবে না, দেখবে আপনার সিভিকে!! তাই সুন্দর এবং Attractive একটি সিভি তৈরি করা আবশ্যক।

একটি হিসাবে দেখে গেছে আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের চাকরি হয় না শুধু মাত্র ভাল মানের একটি সিভির অভাবে। আমরা অনেকই জানি না কি ভাবে একটি সুন্দর এবং সঠিক উপায়ে সিভি লিখতে হয়। আবার অনেকেই অন্যের সিভি বা জীবনবৃত্তান্ত কপি করে সিভি তৈরি করি যা আমাদের অনেক বড় একটা ভুল। মনে রাখবেন কোন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান একজন ব্যক্তিকে চাকরির ইন্টারভিউতে ডাকার পূর্বে সিভি দেখে অনুমান করে নেয় সেই ব্যক্তি তাদের কোম্পানির জন্য উপযুক্ত কি না। আপনার সিভির মধ্যে যদি দায়িত্বশীলতা প্রকাশ না পায় তা হলে কোন ভরসায় একটি কোম্পানি আপনাকে তাদের কোম্পানির দায়িত্ব তুলে দিবে। সুতরাং একটি ভাল মানের সিভি আপনার চাকরি পাওয়ার প্রথম সিঁড়ি বলতে পারেন।

CV ও Resume কি একই জিনিস?

আমরা অনেক সময় সিভি এবং রিজুউম কে একই জিনিস মনে করি। যদিও প্রায় এক জিনিস। যদিও দুটি জিনিস এক ধরনের কাজে বা একই অর্থে ব্যবহার হয়ে থাকে তবুও এই দুটির গঠনগত দিক থেকে কিছুটা ভিন্নতা আছে। সাধারণত সিভি ২-৩ পাতার হয় কিন্তু রিজুউম সবসময় এক পাতায় হয়ে থাকে। তাছাড়া সিভিতে বিভিন্ন বিষয়ে কিছু ব্যাখ্যা বা বর্ণনা দেওয়া হয় কিন্তু রিজুউমে সকল তথ্য খুব সংক্ষেপসিভিতে কি কি বিষয় উল্লেখ করবেন? কাজের ধরন অনুযায়ী সিভি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে কিন্তু কিছু বেসিক বিষয় রয়েছে যা প্রায় সিভিতে একই রকম থাকে। এবং সে বেসিক বিষয় গুলা লিখার আগে আপানকে আগে থেকে সুন্দর ভাবে পরিকল্পনা করতে হবে। কারন সুন্দর এবং স্পষ্ট ভাষায় সংক্ষেপে সিভিতে আপনার বিষয় গুলি উপস্থাপন করতে হবে। অপ্রয়োজনীয়ও কথা দিয়ে সিভি বড় করা উচিৎ নয়। সংক্ষেপে আপনার ইনফরমেশন তুলে ধরে মূল বিষয় বুঝাতে পারলে আপনার সিভি স্মার্ট হবে এবং সহজে চাকরিদাতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবেন।

১) নাম ও ঠিকানা

সিভির প্রথম অংশে সুন্দর করে আপনার নাম এবং স্থানীয় ও বর্তমানে যেখানে বসবাস করছেন সে ঠিকানা লিখতে হবে। নাম লিখার সময় অবশ্যই আপনার একাডেমিক সার্টিফিকেট এর নামানুসারে পুরো নাম লিখতে হবে। আপনার ঠিকানা লেখার ক্ষেত্রে সংক্ষেপে স্পষ্ট করে লিখবেন যাতে সেই ঠিকানায় চিঠি পাঠালে সহজে আপনার হাতে পৌছায়। বর্তমানে যেহেতু তথ্য প্রযুক্তির যুগ সেহেতু যোগাযোগের জন্য একটি মোবাইল নাম্বার ও ইমেইল এড্রেস ঠিকানার সাথে যুক্ত করে দিতে পারেন। যাতে সহজে আপনার সাথে মোবাইল বা ইমেইল আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারে।

২) শিক্ষাগত যোগ্যতা

যে কোন চাকরি পাওয়ার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষাগত যোগ্যতায় স্কুল জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যত একাডেমী সার্টিফিকেট অর্জন করেছেন সব কিছু খুব সুন্দর ভাবে তুলে ধরবেন। আপনি যে স্কুল বা কলেজে পড়েছেন সে স্কুল/কলেজের নাম, কোন শিক্ষা বোর্ড, কত সালে পরীক্ষা দিয়েছেন, কি কি ডিগ্রি অর্জন করেছেন,প্রত্যেকটি পরীক্ষায় কোন গ্রেড বা বিভাগ (মার্ক) পেয়েছেন এই সব কিছু সুন্দর ভাবে লিখতে হবে।

৩) কাজের অভিজ্ঞতা

আপনি যে কাজের জন্য আবেদন করছেন সে কাজের পূর্বের কোন অভিজ্ঞতা আছে কি না তা সিভিতে উল্লেখ করবেন। এছাড়াও আপনি এর আগে কোন কোন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন তা সুন্দর ভাবে লিখতে হবে। সেক্ষেত্রে সর্বশেষ আপনি যেখানে কাজ করেছেন সেটি আগে লিখবেন তারপর সিরিয়াল ভাবে বাকি গুলা লিখবেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে কিছু বিষয় অবশ্যই লিখতে হবে, যে যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন সেগুলার নাম, আপনার পদবি কি ছিল, কত সাল থেকে কত সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন, Job Responsibility এবং আপনার স্পেশাল কোন অর্জন থাকলে সেটা উল্লেখ করতে পারেন সিভি অধিক স্মার্ট হবে।

৪) ভাষাগত দক্ষতা

আমাদের দেশে চাকরির আবেদনের ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার পাশাপাশি ইংরেজি জানাটা বাধ্যতামূলক। ইংরেজি ভাষা দক্ষতা সংক্রান্ত পরীক্ষা—যেমন আইইএলটিএস নিলে তার স্কোর লিখে দেবেন। এছাড়া অন্য কোনো ভাষা জানা থাকলে উল্লেখ করবেন কেননা এগুলো কর্মক্ষেত্রে অনেক কাজে আসে।

৫) কম্পিউটার দক্ষতা

বর্তমানে অধিকাংশ চাকরির ক্ষেত্রে কম্পিউটার জানা বাধ্যতামূলক। প্রায় সব চাকরিতে এখন কম্পিউটার এর দক্ষতা চাওয়া হয়। সে জন্য মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেল ও পাওয়ারপয়েন্টের কাজ জানা থাকলে তা অবশ্যই সিভিতে উল্লখ করবেন। এছাড়া কম্পিউটার বিষয়ে অন্যকোন অভীজ্ঞতা থাকলে সেটিও অবশ্যই উল্লেখ করে দিবেন। আপনার চাকরির আবেদনটি কোন কম্পিউটার বা আইটি কোম্পানির হলে এই অংশে কম্পিউটার বিষয়ক সকল তথ্য অল্প শব্দে বিস্তারিত উল্লেখ করে দিবেন।

৬) রেফারেন্স

আপনার সম্পর্কে ভাল জানে এমন একজনকে আপনার সিভিতে রেফারেন্স হিসেবে সংযোগ করবেন। যাকে রেফারেন্স দিবেন তাকে জানিয়ে তার নাম এবং পদবি ব্যবহার করবেন। কোন কোন ক্ষেত্রে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান থেকে রেফারেন্সে যাঁর নাম থাকে, তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। চেষ্টা করবেন পেশাদারী রেফারেন্স ব্যবহার করার। নিয়োগকারীরা এ ধরণের রেফারেন্সকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।

৭) আপডেট ছবি যুক্ত করুন

আপনার চেহারা ভাল ভাবে বুঝা যায় সদ্য তোলা এমন ছবি সিভিতে ব্যবহার করবেন। স্টাইলিশ কোন ছবি যুক্ত করবেন না। পরিপাটি পোশাকে এবং চুল গুছানো অবস্থায় ছবি তুলবেন। যেন আপনার ছবি দেখে আপনার সম্পর্কে একটা ধারনা পাওয়া যায়।

৮) স্বাক্ষর ও তারিখ

উপরের সবগুলো ধাপ ঠিকমত ফিলআপ করলে আপনার একটি পরিপূর্ণ সিভি তৈরি হয়ে যাবে। সবশেষে নিজের নামের ওপরে একটি Signature (স্বাক্ষর) করে তারিখ বসিয়ে দিলেই আপনার সিভি লেখা কমপ্লিট হবে।

সিভির ফরমেট এবং বর্জনীয় বিষয়

সিভি হচ্ছে এমন একটি জীবনবৃত্তান্ত যা দেখে চাকরিদাতা আপনাকে সরাসরি না দেখেই আপনার সম্পর্কে একটি কমপ্লিট ধারনা পেয়ে থাকে। তাই সিভিতে কিছু বিষয় বর্জন করতে হবে এবং সঠিক ফরমেটে সিভি তৈরি করতে হবে। চেষ্টা করবেন অল্প কথায় নিজেকে ভাল ভাবে উপস্থাপন করতে এবং অবশ্যই A4 সাইজের পেপারে লিখবেন।

Spelling & Grammar এর দিকে বেশি নজর দিবেন। আপনার সিভি’র কোন অংশের বানান কোনক্রমে ভূল করা যাবে না। সিভিতে বানান ভূল লিখলে পুরো সিভিটি চাকরিদাতাদের কাছে গুরুত্ব হারিয়ে ফেলবে। কাজেই সিভি লিখার পর প্রত্যেকটি বানান ডাবল চেক করে নিবেন।সিভি যেন কোনোভাবেই দুই পৃষ্ঠার বেশি না হয়। আর অপ্রয়োজনীয়ও কথা লিখে সিভি বড় করবেন না। ফরমাল ইমেইল অ্যাড্রেস ব্যবহার করবেন। এবং একটির বেশি মোবাইল নাম্বার ব্যবহার না করায় ভাল এবং কোন ধরনের ভুল বা মিথ্যা তথ্য দিবেন না।