LinkedIn নামটির সাথে আমরা অনেকেই পরিচিত আবার অনেকে হয়ত খুব বেশি জানি না এইটির ব্যাপারে। এই LinkedIn হল মুলত একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। ফেসবুকের মতই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হলেও লিংকডইন ফেসবুক থেকে অনেকটা আলাদা তার বিশেষ কিছু দিকের জন্য। এই প্লাটফর্মে আপনি আপনার পছন্দ মত চাকরি খুজতে পারবেন, চাকরীতে আবেদন করতে পারবেন এবং কর্পোরেট অনেক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগের করতে পারবেন।
কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন আপনার একটি সুন্দর স্মার্ট লিংকডইন প্রোফাইল। প্রতিদিন অনেক মানুষ লিংকডইন প্রোফাইল খুলছেন কিন্তু স্মার্ট এবং মানসম্মত প্রোফাইল না থাকার কারনে আশানুরূপ রেজাল্ট পাচ্ছেন না। লিংকডইন প্রোফাইল সাজানোর ক্ষেত্রে অনেকে ছোটখাটো কিছু বিষয়ে ভুল করে থাকে। এগুলো এড়াতে পারলে আপনার প্রোফাইল চমৎকারভাবে উপস্থাপন করতে পারবেন। আজ আমরা জানব কিভাবে আপনার লিংকডইন প্রোফাইল স্মার্ট এবং সুন্দর ভাবে সাজাবেন।
১) প্রফেশনাল প্রোফাইল ছবি ও ব্যাকগ্রাউন্ড ছবি
বাংলায় একটি সুন্দর প্রবাদ আছে 'প্রথমে দর্শনধারী, তারপর গুণবিচারী'। একটি সুন্দর ছবি সবাইকে আকৃষ্ট করবে আপনার প্রোফাইলের দিকে। তাই প্রোফাইল ছবি নির্বাচনে আমাদের অনেক সচেতন হতে হবে। সব সময় চেষ্টা করবেন আপডেট একটি প্রফেশনাল মানের ছবি প্রোফাইল পিকচার হিসেবে রাখতে। কোন স্টাইলিশ অথবা পাসপোর্ট সাইজের কোন ছবি প্রোফাইল পিকচার হিসেবে দিবেন না। সুন্দর এবং সাবলীল একটি ছবি প্রোফাইল ছবি তে অ্যাড করবেন।
তারপর ব্যাকগ্রাউন্ড ছবি হিসেবে আপনি সুন্দর একটি ছবি অ্যাড করবেন। সেক্ষেত্রে আপনি আপনার কোন অর্জন বা সাফল্যের কোন মুহূর্তের ছবি দিতে পারেন। ধরুন আপনি আপনার কাজের স্বীকৃতি জন্য পুরষ্কার পাচ্ছেন সেই মুহূর্তের ছবি হতে পারে। অথবা অন্য কোন বিশেষ সাফল্যের মুহূর্ত হতে পারে। তাতে করে আপনার প্রোফাইল যে ভিজিট করবে আপনার সম্পর্কে তার একটা পজেটিভ ধারনা আসবে।
২) প্রোফাইল টাইটেল অ্যান্ড সামারি
আপনার লিংকডইন প্রফাইলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল প্রোফাইল টাইটেল। যা ১২০ কারেক্টারের মধ্যে লিখতে হবে। সুতরাং এখানে প্রতিটি অক্ষর, স্পেস, দাড়ি ও কমার সদ্ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ। আপনার টাইটেল এমন ভাবে লিখেবন যেন টাইটেল পড়ে আপনার কাজ এবং আপনার সম্পর্কে একটা ক্লিয়ার ধারনা পায়। আপনি কোন বিষয় এবং কি নিয়ে কাজ করেন। আপনি ছাত্র হলে সেটাও সুন্দর ভাবে লিখে দিতে পারেন।
লিংকডইন সামারি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আপনার প্রোফাইল পিকচার, ব্যাকগ্রাউন্ড পিকচার, প্রোফাইল টাইটেল এবং সামারি দেখে একজন ভিজিটর আপনার সম্পর্কে ধারনা নিবেন। তাই সামারিতে খুব সুন্দর করে নিজেকে প্রকাশ করতে হবে। সামারির শুরুতে আপনি বর্তমানে কোথায় কাজ করছেন এবং সেখানে আপনার অর্জন কি কি। এর আগে আপনি কোথায় কাজ করেছেন সেটা আপনি দিতে পারেন এবং আপনার স্পেশালিটি কি কি এই সব কিছু আপনি সামারিতে সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করতে পারেন। লিংকডইন ছাড়াও আপনার সাথে আর কি কি মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারবে সেগুলার লিঙ্ক সামারিতে দিয়ে দিবেন যাতে করে খুব সহজে অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারে।
৩) কাজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরুন
আপনার কাজের অভিজ্ঞতা লিখার সময় খেয়াল রাখবেন যেন সেটা খুব বেশি বড় আকারে না হয়। সুন্দর এবং স্মার্ট ভাবে আপনার আপনার পেশাগত দায়িত্ব ও অর্জন তুলে ধরবেন এবং নিজের এক্সপেরিয়েন্স লেখার ক্ষেত্রে সব সময় আপনি বর্তমানে কোথায় কাজ করে থাকেন সেটা আগে তুলে ধরবেন এবং তার আগে আপনি কোন কোন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন সে সব কিছু সুন্দর ভাবে তুলে ধরবেন।
ধরুন আপনি বর্তমানে কোন প্রতিষ্ঠানে আছে সেখানে আপনার পদবি কি এবং এখন পর্যন্ত আপনার অর্জন কি কি সে সব বিষয় আপনি তুলে ধরবেন। অথবা এর আগে আপনি কোন কোন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন এবং সেখানে আপনার পদবি এবং আপনার কাজের সাফল্য,সে প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের পিছনে আপনার অবদান কি ছিল এবং আপনার কোন আইডিয়া সে প্রতিষ্ঠানকে নতুন সাফল্য অর্জনে আবদান রেখেছিল সব কিছু আপনি সুন্দর স্মার্ট ভাবে তুলে ধরবেন।
৪) মিডিয়া ফাইল অ্যাড করুন
আপনি যখন আপনার এক্সপেরিয়েন্স অ্যাড করবেন তখন সাথে মিডিয়া নামে একটি অপশন পাবেন। এই মিডিয়া আপনার কাজের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি আপনাকে অনেক বেশি মূল্যবান করে তুলবে। ধরুন আপনি আপনার কাজের জন্য আপনার প্রতিষ্ঠান থেকে কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ একটি পুরষ্কার পেলেন সেই মুহূর্তের ছবি হতে পারে, অথবা আপনি যে যে প্রোজেক্ট নিয়ে কাজ করেছেন তার কোন ছবি হতে পারে, অথবা আপনার কোন লিখা আর্টিকেল কোন নিউজ পেপারে এসেছে সেটার ছবি হতে পারে। আপনি আনলিমিটেড মিডিয়া ফাইল অ্যাড করতে পারবেন।
৫) একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড ও স্কিল ও অর্জন যোগ করুন
একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড ও স্কিল সব কিছু ধারাবাহিক ভাবে ফুটিয়ে তুলুন। আর একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড ও স্কিল লেখার সময় সাম্প্রতিক সময়ের পড়াশোনা, স্কিল ও অর্জন নিয়ে সবার আগে লিখুন। তারপর ধারাবাহিক ভাবে পিছনের গুলা লিখবেন। মনে রাখবেন, লিংকডইন প্রোফাইল তৈরির সময় কোন অংশই খালি রাখবেন না।
৬) অল স্টার প্রোফাইল তৈরি করুন
চেষ্টা করুন অল স্টার প্রোফাইল তৈরি করতে। প্রতিটি অংশ পূরণ করলে লিংকডইন আপনার প্রোফাইলটি অল স্টার করে দিবে, এতে আপনার প্রোফাইল ভিউ অনেক গুন বাড়বে। Add New Profile Section অপশনে গিয়ে আপনার Background, Skills, Accomplishments যা যা চাওয়া হয়েছে সব ঠিক ভাবে ফিলাপ করলে লিংকডইন আপনাকে All Star দিবে।
৭) যেভাবে ভাবে জব সার্চ করবেন
লিংকডইন প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ জব সার্চ করে এবং আবেদন করে থাকে। আপনি খুব সহজে লিংকডইন মাধ্যমে জব সার্কুলার খুজে পেতে পারেন। আর তার জন্য আপনাকে লিংকডইন সার্চ অপশনে গিয়ে কোম্পানির নাম লিখে সার্চ দিলে সে কোম্পানি চলে আসবে এবং আপনি সে কোম্পানি Following কর রাখলে তাদের সকল আপডেট লিংকডইন নিউজ ফিডে দেখতে পাবেন এবং চাইলে সে কোম্পানির প্রোফাইল গিয়ে apply করতে পারবেন।
মনে রাখবেন Apply করতে আপনাকে এক্সট্রা ভাবে সিভি দিতে হবে না আপনার লিংকডইন প্রোফাইল আপনার সিভির কাজ করবে। আপনার লিংকডইন প্রোফাইল ই আপনার সিভি। সুতরাং প্রফাইলে সকল তথ্য সেই ভাবে দেয়ার চেষ্টা করবেন।
৮) প্রতিদিন একটিভ থাকার চেষ্টা করুন
মনে রাখবেন লিংকডইন কিন্তু একটি সোশ্যাল মিডিয়া। তাই চেষ্টা করুন প্রতিদিন এক্তিভ থাকতে এবং পাশাপাশি আপনার প্রতিদিনকার ভাল কিছু অর্জন বা সাফল্য চিত্র তুলে ধরতে। আপনার প্রফেশনাল যে কোন ভাল কাজ আপনি লিংকডইন শেয়ার করতে পারেন। যেমন আপনি হয়ত নতুন কোন একটি প্রোজেক্ট সফল হয়েছেন সেটার একটি ছবি তুলে অ্যাড করতে পারেন, আপনি কোন একটি বিশেষ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেছেন সেই ছবি গুলা অ্যাড করতে পারেন সুন্দর একটি ক্যাপশন দিয়ে।
অর্থাৎ আপনার প্রতিদিনকার সাফল্য এবং কাজগুলা আপনি প্রকাশ করবেন। আপনার কাজ যতবেশি প্রকাশ করবেন আপনার পরবর্তী সুযোগ তত বেড়ে যাবে। বিতর্কিত কোন কিছু শেয়ার করা থাকে বিরত থাকুন।
LinkedIn Profile সাজানোর সময় উপরে দেয়া বিষয়গুলোর দিকে বিশেষ নজর রাখবেন। নিজের মেধা ও যোগ্যতাকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করুন এবং কোন জবে আবেদন করার আগে ভালভাবে সব কিছু দেখে-শুনে আবেদন করবেন এবং কোন প্রকার লেনদেনে যাবেন না। মনে রাখবেন ভালোর বিপরীতে খারাপের অবস্থান।